এইচএসসি প্রস্তুতি
ভূগোল দ্বিতীয় পত্র
অভিগমন কি? অভিগমনের কারণ,ধরণ ও প্রভাব......
মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমনাগমন করে। সাধারণভাবে মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন কে স্থানান্তর বলে। মানুষের স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাওয়া বা গমন করাকে অভিগমন(Migration) বলে। অভিগমন এর ইংরেজি শব্দ Migration; যা এসেছে ল্যাটিন শব্দ Migrati থেকে যার অর্থ বাসস্থান পরিবর্তন ।আমরা বলতে পারি অভিগমন বলতে কোন ব্যক্তির স্হায়ী গমনকে বুঝায়, যেখানে ব্যক্তি একটি সমাজ ব্যবস্থা থেকে অন্য সমাজব্যবস্থায় গমন করে।
অভিগমনের কারণ
অভিগমন মূলত দুই প্রকার অভ্যন্তরীণ অভিগমন ও আন্তর্জাতিক অভিগমন।
অভ্যন্তরীণ অভিগমন এর কারণ সমূহ
বৈজ্ঞানিক কারণ, অর্থনৈতিক কারণ, রাজনৈতিক কারণ, শিক্ষাগত কারণ ও রোগ ব্যাধি সংক্রান্ত।
বৈজ্ঞানিক কারণের মধ্যে রয়েছে
জন্মহার:
দেশের যে শহর বা গ্রামে জনসংখ্যা বেশি বা জন্মহার বেশি সেখানে সাধারণত ঘনবসতি তে পরিণত হয়। পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্মক্ষম মানুষেরা অন্য শহরে গমন করে।
পিতা-মাতার চাকরির কারণে:
কোন শহর থেকে পিতামাতা তাদের বদলি জনিত কারণে বসতি বা স্থান ত্যাগ করায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাদের সঙ্গে অভিগমন করে।
নারী-পুরুষ ভেদ:
দেশের কোন অঞ্চল থেকে নারীর চেয়ে পুরুষের অভিগমনের সংখ্যা বেশি পুরুষেরা তাদের পরিবার পরিচালনার জন্য অন্য স্থানে গিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য অভিগমন করে। আর মহিলারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈবাহিক সূত্রে অভিগমন করে।
মৃত্যুহার:
যেসব গ্রামে বা শহরে মৃত্যুহার বেশি সেখান থেকে মানুষ ভয়ে বা নিরাপত্তার কারণে বা উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দেশের অন্য কোন শহরে অভিগমন করে ।
অর্থনৈতিক কারণ
অধিক মজুরি ও বেতন লাভের সুযোগ:
যেসব অঞ্চলে অধিক মজুরি ও বেতনে নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেসব অঞ্চলে দেশের বিভিন্ন শহর থেকে মানুষের অভিগমন বেশি হয়।
মাথাপিছু কৃষি জমি হ্রাস :
জনসংখ্যা বৃদ্ধি জনিত কারণে বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি বংশানুক্রম অনুসারে মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পায় ।ফলে ওই জমি থেকে উৎপন্ন ফসল দিয়ে জীবন ধারণ করা সম্ভব হয় না ।ফলে বাধ্য হয়ে অন্য কাজের সন্ধানে মানুষ অভিগমন করে ।
ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ:
দেশের যেসব অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেসব অঞ্চলে দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে মানুষ অভিগমন করে ।
পর্যাপ্ত নিয়োগ সুবিধা :
দেশের শিল্পাঞ্চল ,শহরাঞ্চল পর্যাপ্ত নিয়োগের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। সেখানে ব্যাপক হারে অভিগমন করে। যেমন -বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয় বলে ওই অঞ্চলে মানুষ অভিগমন করে।
বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা:
দেশের যে অঞ্চলে বিনিয়োগ করার সুযোগ সুবিধা বেশি সেসব অঞ্চলে উদ্ধৃত আয়ের লোকেরা বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহী হয়। কারণ সেখানে অবস্থান করে প্রচুর আয়-উপার্জনের সম্ভাবনা থাকে ।
রাজনৈতিক কারণ
সরকারি পর্যায়ে বসতবাড়ি নির্মাণ:
সরকার গরিবদের মধ্যে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে দেয় যার ফলে অভিগমন ঘটে। বাংলাদেশ সরকার ভূমিহীনদের জন্য সরকারি জমির উপর অনেক ঘরবাড়ি ও তার সঙ্গে কিছু জমি দিয়েছে। যার ফলে সেসব স্থানে মানুষের অভিগমন হয় যাকে আমরা গুচ্ছগ্রাম বলি ।
সরকারি খাস জমি প্রদান :
সরকার জমি নাই এমন ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে জমি বিতরণ করে থাকে যার ফলে অভিগমন ঘটে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অভিগমন হয়েছে অনেক বাঙালি। রাঙ্গামাটি ,খাগড়াছড়ি ,বান্দরবান পাহাড়ে জমি বরাদ্দ নিয়ে অনেক বাঙালি সেখানে অভিগমন করেছে।
শিক্ষাগত কারণ :
দেশের বড় বড় শহর গুলোতে অন্যান্য অঞ্চল থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকায় মানুষ অভিগমন করে ।
রোগব্যাধি সংক্রান্ত :
বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন কলেরা বসন্ত যক্ষা ইত্যাদি আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ অন্যত্র গমন করে।
আন্তর্জাতিক অভিগমনের কারণ সমূহ :
আকর্ষণজনিত কারণ ও বিকর্ষণজনিত কারণ
যেসব কারণ অভিগমন কে সরাসরি উৎসাহ প্রদান করে থাকে অর্থাৎ জনগণকে স্বদেশ ত্যাগ করে বিদেশে যাওয়ার জন্য আগ্রহী করে তোলে তাকে আকর্ষণজনিত কারণ বলে।
যেমন -বৃত্তি বা চাকরির সুযোগ
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ
অধিক উপার্জনের সুযোগ
অজানাকে জানা ও চেনার আগ্রহ
অধিক মুনাফা লাভের ইচ্ছা
ধর্মীয় ও জাতিগত ও সংস্কৃতিগত আকর্ষণ অনুভব
সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায়
বিকর্ষণ জনিত কারণে:
আবার যেসব কারণে বিদেশ যাওয়ার জন্য বাধ্য করে তাকে বিকর্ষণ জনিত কারন বলে।
যেমন-বৃত্তি ও চাকরির অভাব
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
যুদ্ধ-বিগ্রহ
দেশ বিভাগ
স্বদেশ এ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অভাব
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের নিষ্পেষিত হওয়ার আশঙ্কা
ধর্মীয় দিক থেকে সংখ্যালঘু হয়ে পড়লে নিরাপত্তার অভাব
অভিগমন ধরণ :
স্থায়ী বাসস্থান পরিবর্তন করে মানুষ একই দেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে অন্য কোন স্থানে নিজ জেলার বাইরে কিংবা ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে অন্য কোন স্বাধীন দেশে গমন করে বলে অভিগমন কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
অভ্যন্তরীণ অভিগমন ও আন্তর্জাতিক অভিগমন :
গ্রাম থেকে শহরে অভিগমন
উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের গ্রাম থেকে শহরে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। গ্রামীণ পরিবেশে কাজ সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় মানুষ শহরের উদ্দেশ্যে গমন করে ।গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা আর শিক্ষিত বেকাররা চাকরির আশায় স্থানান্তরিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রায় মানুষ গ্রাম থেকে শহরে অভিগমন করে ।
গ্রাম থেকে গ্রামে অভিগমন :
কাজের সন্ধানে বা কাজ করার উদ্দেশ্যে মানুষ নিজ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে অভিগমন করে। বিবাহিত মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে গমন করে। তেমনি স্বামী স্ত্রী উভয়ে উভয়ের বাপের বাড়িতে গমন করতে পারে ।
শহর থেকে শহরে অভিগমন:
শহর থেকে শহরে স্থানান্তর বা অভিগমন হয়ে থাকে। নতুন চাকরি, ব্যবসা -বাণিজ্যের সুযোগ ইত্যাদি কারণে মানুষজন শহর থেকে অন্য শহর, জেলা শহর থেকে থানা শহরে অভিগমন করে। উচ্চশিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রী এক শহর থেকে অন্য শহরে অভিগমন করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক জীবনে বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে এ ধরনের অভিগমন হয়ে থাকে ।
শহর থেকে গ্রামে অভিগমন :
প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ নীতির ফলে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর গ্রাম পর্যায়ে গমন করে। উন্নত দেশের চেয়ে অনুন্নত দেশে সরকারি বা বেসরকারি চাকরি লাভের পর তারা শহর থেকে গ্রামে গমন করে ও বসবাস করে। এর ফলে হাজার হাজার সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তা পরিবার স্থানান্তরিত হয়। শিক্ষাজীবন শেষে শহরে কাজের সুযোগ না পেয়ে কেউ গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য স্থানান্তরিত হয় ।আবার কেউ দীর্ঘ সময় শহরে চাকরি বা বসবাসের পর অবসর জীবনে নিজ গ্রামে চলে আসে ।
আন্তর্জাতিক অভিগমন :
যখন মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য অভিগমন করে তাকে আন্তর্জাতিক অভিগমন বলে ।একটি স্বাধীন দেশের লোক তার নিজ জন্মভূমি ছেড়ে যদি অন্য কোন স্বাধীন দেশে বসবাসের উদ্দেশ্যে স্থানান্তরিত হয় তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক অভিগমন বলে।
আন্তর্জাতিক অভিগমন কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়
বহিরাগমন (Immigration):
অন্য দেশ থেকে কোন স্থানে আগমন করাকে বহিরাগমন বলে। অর্থাৎ অন্য দেশ থেকে তারা আসে তাদেরকে বহিরাগমন বলে।
বহির্গমন(Emigration):
উৎসভূমি থেকে অন্য দেশে গমন করাকে বহির্গমন বলে। অভাব কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে অধিকতর সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে এ ধরনের অভিগমন ঘটে থাকে। আন্তর্জাতিক বহির্গমনে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রচুর সংখ্যক মানুষ অভিগমন করে থাকে। আবার অনুন্নত দেশ থেকেও প্রচুর মানুষ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গমন করে।
অভিগমনের প্রভাব:
অভিগমন এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে
অর্থনৈতিক প্রভাব :
অভিগমনের ফলে অর্থনীতির উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক অভিগমনকারীগণ নিজদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ থেকে যেসব বাংলাদেশী বিদেশে কর্মরত রয়েছে তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে নিজ দেশে পাঠায় এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পরিলক্ষিত হয়।পাশাপাশি ঐ প্রবাসী বাঙালির পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন আর্থিকভাবে লাভবান হয়।
জনসংখ্যার উপর প্রভাব:
একটি দেশের জনসংখ্যার জন্য অভিগমনের ভালো দিক হলো ওই দেশের জনসংখ্যার পুনঃবন্টন, সম্পদ অনুযায়ী জনসংখ্যার বন্টন, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি।
এছাড়াও এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষরা অধিক আগ্রহী বলে নারী-পুরুষের অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।
সামাজিক প্রভাব:
অভিগমন এর ফলে সামাজিক ভাবে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক উভয় ধরনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অভিগমনের কারণে পরিবার নিয়ন্ত্রণ, নারী শিক্ষা, নতুন প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হয় এবং মানুষ বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে ।এর কিছু খারাপ দিক রয়েছে পরস্পরের মধ্যকার বন্ধন কমে যায়, হতাশা বৃদ্ধি পায় এবং মানুষ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়
জৈবিক পরিবর্তন:
অভিগমনের ফলে মানুষ তার জন্মস্থান ত্যাগ করে কোন নতুন জায়গায় যাওয়ার ফলে তার মধ্যে জৈবিক পরিবর্তন ঘটে।নতুন পরিবেশে এসে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে অনেকের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। এছাড়া গ্রাম থেকে শহরে অভিগমনের ফলে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাব দেখা দেয় বলে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।
সাংস্কৃতিক পরিবর্তন :
কোনো স্থান থেকে অন্য স্থানে অভিগমনের ফলে মানুষের সংস্কৃতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। যেমন- ভাষা ,খাদ্যাভাস ,পোশাক, রীতিনীতির পরিবর্তন ইত্যাদি।
পরিবেশগত প্রভাব :
পরিবেশের উপর অভিগমনের বিশেষ প্রভাব আছে। শহর অঞ্চলের অধিক অভিগমনের ফলে শহরের সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শহরে অধিক জনসংখ্যার ফলে অপরিকল্পিতভাবে বাসস্থান ও স্থাপনা তৈরি হয় এবং বসতি সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে পরিবেশের উপর বিরূপপ্রভাব পড়ে। এছাড়াও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অধিক চাপ পড়ে। শহরাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, বায়ুদূষণ, পানি দূষণ , পয়োনিষ্কাশন সমস্যা এবং বজ্র পদার্থ ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ শহর অঞ্চলের প্রধান সমস্যা ।যা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
অভিগমন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
প্রথমেই প্রশ্ন আসে অভিগমন কি?
মানুষের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থায়ী বা অস্থায়ী ভাবে গমন করাই হল অভিগমন।
অভিগমন কয় প্রকার?
অভিগমন সাধারণত দুই প্রকার। যথা,
১) অভ্যন্তরীণ অভিগমন
২) আন্তর্জাতিক অভিগমন
অভ্যন্তরীণ অভিগমন: একই দেশের অভ্যন্তরে একই স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বা জোরপূর্বক গমন করাকে অভ্যন্তরীণ অভ্যন্তরীণ বলে। যেমন ,কুমিল্লায় বসবাসরত কোন ব্যক্তি বা পরিবার স্থায়ীভাবে থাকার উদ্দেশ্যে ঢাকায় গমন করলে সেটা হবে অভ্যন্তরীণ অভিগমন। আন্তর্জাতিক অভিগমন: মানুষ যখন স্বেচ্ছায় বা জোরপূর্বক নিজের দেশের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে অন্য দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে গমন করে তখন তাকে আন্তর্জাতিক অভিগমন বলে। যেমন কোনো ব্যক্তি বা পরিবার উন্নত জীবনযাপনে আকর্ষিত হয়ে ,বাংলাদেশ ছেড়ে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস এর উদ্দেশ্যে গমন করে। এটাই তখন আন্তর্জাতিক অভিগমন এর উদাহরণ।
অভিগমনের কারণ:
প্রাকৃতিক , অর্থনৈতিক ,রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে মানুষ অভিগমন করে। এগুলো দুই ধরনের। যথা,আকর্ষণমূলক কারণে অভিগমন: যে সমস্ত কারণ নতুন কোন স্থানে বসতি স্থাপনের জন্য মানুষকে উৎসাহিত বা প্রোথত করে সে গুলোকে গন্তব্যস্থলের টান বা আকর্ষণমূলক কারণ বলে।
আকর্ষণমূলক কারণগুলো হলো:
*আত্মীয়-স্বজন ও নিজ গোষ্ঠীভুক্ত জনগণের নৈকট্য লাভ।
*বিশেষ দক্ষতার চাহিদা ও বাজার এর সুবিধা।
*বিবাহ ও সম্পত্তি প্রাপ্তি মূলক ব্যক্তিগত সুবিধা।
*কর্মসংস্থান ও অধিকতর আর্থিক সুযোগ-সুবিধা।
*উন্নত জীবন যাত্রার উদ্দেশ্যে।
*শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা গত সুবিধা।
অভিগমনের বিকর্ষণ মূলক কারণ: যে সমস্ত কারণ মানুষকে পুরাতন বাস স্থান পরিত্যাগ করে অন্য স্থানে যেতে বাধ্য করে সে গুলোকে উৎস স্থল এর ধাক্কা বা বিকর্ষণ মূলক কারণ বলে।
বিকর্ষণ মূলক কারণগুলো হলো:
*সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বৈষম্য।
*প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনিত ক্ষয় ক্ষতি।
*অর্থনৈতিক মন্দা।
*ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্রমাগত ক্ষয়ক্ষতি।
*রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।
*জনসংখ্যা বৃদ্ধি জনিত সমস্যা।
ইত্যাদি এই সকল আকর্ষণজনিত ও বিকর্ষণ জনিত কারণে অভিগমন সংঘটিত হয়ে থাকে। অভিগমন একটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অভিগমনের স্বাভাবিক ফলাফল বা প্রভাব হচ্ছে জনসংখ্যা বন্টন বা অবস্থানিক পরিবর্তন। অবস্থানগত পরিবর্তন ছাড়াও অভিগমনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় অর্থনৈতিক সামাজিক ও যনো বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন হতে পারে।
অভিগমনের ফলে সংস্কৃতির কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অভিগমনের ফলে সংস্কৃতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। যেমন :ভাষা ,খাদ্যাভাস ,পোশাক, রীতি নীতির পরিবর্তন। অভিগমনের ফলে সামাজিক আচার আচরণের আদান-প্রদান হয়। সামাজিক অনেক রীতিনীতি এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তরিত হয়। অধিক ভাবে অন্য দেশের সংস্কৃতি রপ্ত করার কারণে নিজের দেশের সামাজিক বৈশিষ্ট্য ক্ষুন্ন হয়। রাষ্ট্র অভ্যান্তরীণ অভিগমন এও এক অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা অন্য অঞ্চল প্রভাবিত হয়